সারা বিশ্বে যেমন 1st January দিন New Year উদযাপন করা হয়, তেমনি বাঙালিদের নতুন বছর শুরু হয় পহেলা বৈশাখ দিন থেকে। এই দিনটি এপ্রিল মাসের ১৪ তারিকে সাধারণত হয়ে থাকে। এই দিনটিকে বাংলা নববর্ষ বলে থাকে। আজকের আমরা জানবো এই বাঙালি নববর্ষের ইতিহাস।
নববর্ষ এবং বঙ্গাব্দের ইতিহাস : বাংলাতে যে ১২ মাসের নাম আছে তা সাধারনণত ১২ টি নক্ষত্রর নামে হয়ে থাকে। যেমন বৈশাখ এসেছে বিশাখা নামের নক্ষত্রর থেকে। তেমনি জ্যৈষ্ঠ এসেছে জ্যেষ্ঠা নক্ষত্র থেকে, আষাঢ় মাসের নামকরণ হয়েছে অষঢ়া নক্ষত্র থেকে, শ্রাবণ মাসের নামকরণ হয়েছে শ্রবণা নক্ষত্র থেকে, ভাদ্র মাসের নামকরণ হয়েছে ভদ্রা নক্ষত্র থেকে, আশ্বিন: অশ্বিনী নক্ষত্র থেকে, কার্তিক: কৃতিকা থেকে, অগ্রহায়ণ: মৃগশিয়া থেকে, পৌষ: পুষ্যা থেকে ,মাঘ: মঘা থেকে, ফাল্গুন: ফাল্গুনী থেকে আর চৈত্র: চিত্রা নক্ষত্র থেকে। এবার আসা যাক বাংলা নববর্ষার ইতিহাস। সাধারণত এর ৩ টি ভিন্ন মতবাদ আছে |
(ক) আকবরের অবদান: কথিত আছে যে মুঘল সম্রাট আকবর যখন তার অনুচরকের বাঙালা থেকে খাজনা আদায় করতে পাঠাই তখন তারা দেখেন যে খাজনা দেবার সময় বাঙালি কৃষকদের সন তারিক গণনা করতে অনেক অসুবিধা হচ্ছে। তখন সম্রাট ভাবলেন যে বাংলার কৃষকের সুবিধার জন্য সন তারিক কে ভারতের প্রচলিত শকাব্দ এর সাথে সংযুক্ত না করে আরবের ক্যালেন্ডার হিজরীর সাথে সংযুক্ত করা হলে কেমন হয় । ভারতের মুঘল ক্যালেরদের তখন পরিচালিত হতো হিজরী ক্যালেন্ডারের অনুসারে যেটা চাঁদের ওপর নির্ভরশীল ছিল । কিন্তু এতেও কৃষকদের অসুবিধা হচ্ছিলো কারণ তাদের কৃষিকাজ চাঁদের ওপর ( অমাবস্যা /পূর্ণিমা) উপর নির্ভরশীল ছিল না । তখন সম্রাট আকবর কিছু পরিবর্তন করেন। তিনি কিছু জোতিষিদের সাথে পরামর্শ করে মুসলিমদের চাঁদ ও হিন্দু দেড় সোর ক্যালেন্ডার কে একত্র করে একটি নতুন ক্যালেন্ডার প্রচলন করেন। 1584 সালের 10ই /11 ই March থেকে বাংলার ক্যালেন্ডার এর উৎপত্তি হয় | এই দিন থেকে প্রথম সন গণনা করা হয় | তখন সেই বছরের নাম দেয়া হয় ফসলি সন | পরে তা বাংলা সন করা হয় । তখন বাংলা সনের শেষের দিন অব্দি বাংলার কৃষকদের খাজনা পরিষদ করতে হতো। তাই সম্রাট এই দিন বাংলার কৃষকদের জন্য সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও মিষ্টি বিতরণের আয়োজন করতেন। হালখাতার প্রচলন এই দিন থেকেই হয়েছিল। হালখাতা হলো একটা নূতন হিসাব বই যেটা বাংলার ব্যাবসায়ীরা তৈরী করতেন।
শশাঙ্কের অবদান:- বাংলার সনএর প্রবর্তক আকবর হলেও অনেকে মনে করেন যে বাংলা সনের জন্মদাতা গৌড় সম্রাট রাজা শশাঙ্ক। যার রাজধানী ছিল কর্ণসুবর্ণ। প্রথমে তিনি ছিলেন গুপ্ত সম্রাটের অধীনে এক সামান্ত রাজা। কিন্তু পরে নিজের বাহুবলে স্বাধীন গৌড়ের সূচনা করেন। তিনি পড়ি ৪৫ বছর রাজত্ব করেছিলেন। ইতিহাসবিদের মতে তার সিংহাসনের আরোহনের সময়কাল থেকেই বঙ্গাব্দ চালু করা হয়। ইতিহাসবিদের হিসাব সেই ভাবেই মিলে যাই।
আধুনিক নববর্ষের সূচনা: 1917 খ্রিস্টাব্দে প্রথম বিশ্বযুদ্ধএ ১লা বৈশাখের দিনে ব্রিটিশদের জয়লাভের কামনার্থে তখন বাংলাতে এক বিশেষ অনুষ্ঠানের সূচনা করা হয়েছিল। তখন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বাড়িতে এই সময় বাংলায় নববর্ষ পালন করা হয়েছিল। পরে তার রেশ কলকাতা সহ সারা বাংলাতে ছড়িয়ে পরে।
উপসংহার :- বাঙালি নববর্ষের ইতিহাস বা বঙ্গাব্দের শুরুর ইতিহাস হয় হোক না কেন এই দিনে সারা বাংলার মানুষ উৎসব আনন্দে মেতে উঠে। বাড়িতে বাড়িতে বিশেষ পুজোর আয়োজন করা হয়। নিরামিষ ভোজন করা হয়। অনেকে আবার সন্ধ্যাতে বিশেষ পার্টির আয়োজন করেন। দোকানে দোকানে নতুন হালখাতার শুরু হয়। মানুষের আনন্দের ঢল নাকে রাস্তাতে। বাংলা তথা ভারত এক নতুন সাজে সেজে ওঠে এই দিন। তাই নববর্ষের শুভেচ্ছা জানিয়ে আমার এই আর্টিকেল শেষ করলাম। সবাইকে বাংলা নববর্ষর শুভেচ্ছা।
আপনাদের যদি এই পোস্ট টি ভালো লেগে থাকে তাহলে নিচে লাইক ও কমেন্ট করে যাবেন। এবং আরো ভালো পোস্ট পেতে এই ওয়েবসাইট টি নিয়মিত visit করবেন। Thank You.